Abir's blog

Unspoken Words...

এভাবেও ফিরে আসা যায়

Posted by ibrad-spandan.blogspot.com On Monday, February 15, 2010 0 comments


অরণ্য এখন প্রবাশী বাঙ্গালি। কাজের সুত্রে West USA তে আসা। ৬-৭মাস হবে।সকাল ৮টায় আজ সে অফিসে। নতুন চাকরী তাই দারূন কাজের চাপ। Projectএর ডেডলাইন শেষ হতে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকী।এক কাপ কফি নিয়ে সে তার রুমে ঢুকল।তার টিমের বাকিরা এখনো আসেনি। চওড়া কাচের জানলার ওপারে ধোয়াশা পুরটা কাটেনি।বাইরে গাড়ীর শব্দের চেনা তীব্রতাও আজ অন্য দিনের থেকে অনেক কম। আসেপাশের চেনা কাচে ঢাকা বাড়ি গুলোর এখনও ঘুম ভাঙেনি। বারো তলার জানালা দিয়ে অরণ্য দেখল একটা পুলিসের গাড়ি পাশের রাস্তার স্তব্ধতা ভেদ করে হুশ করে বেড়িয়ে গেল।প্রতিদিনের অভ্যাস মত সে কম্পিউটারের সামনে গিয়ে বসল। West USA এর সাথে কলকাতার সময়ের ফারাক প্রায় সারে ষোল ঘন্টার।মানে কলকাতায় এখন প্রায় রাত দুটো।কাজেই কলকাতার কাউকে এখন পাওয়াটা একটু অসম্ভব-মনে মনে ভাবলো সে।
দ্বীপকে অনলাইন পেল।অরণ্যর কলেজের প্রিয় বন্ধু বলতে যে দুজনের কথা মনে পরে তার একজন হল দ্বীপ।অন্য জন আদি। দ্বীপ গল্পের বইয়ের পোকা।নিজেও ভাল লিখতে পারে। দু’একটা লেখা এর মধ্যে লিটল মাগাজিনে বেরিয়েছে।সামনে পুজোর আগে নাকি নিজের লেখা বই বার করছে।তবে ঠিক কবে অরণ্য তা জানেনা।
অরণ্য- কিরে এত রাতে?তোদের ওখানে তো এখন মাঝ রাত।ঘুমাসনি এখনও?বরাবরের মত পেটের প্রব্লেম নাকি?
অনেক দিন পরে পেলাম তোকে। কোথায় ছিলি এতদিন?
দ্বীপ- খুব ধকল গেছে এই কদিন। তাই আর এদিকে online আসতে পারিনি। আসলে পাবলিশারের সাথে একটু ব্যস্ত ছিলাম।জানিস কাল আমার বই বেড়োবে।এত তারাতারি সব ঠিক হয়ে যাবে নিজেই বুঝিনি।কাল দুপুরে কলকাতা প্রেস ক্লাবে বইএর আনুষ্টানিক প্রকাশ হবে।আর তার আনন্দতেই আজ আর ঘুম আসছেনা।টেন্সন ও হছে।কি হাতি ঘোড়া লিখেছি জানিনা।পাঠকরা কি ভাবে নেবে কে জানে।
অরণ্য- দারুন খবর।Party কবে দিবি? আমি বাদ পোরবোনাতো Party থেকে?আর একদম tension নিসনা বুঝলি।বই হইহই করে বিক্রি হবে দেখিস।এই অরণ্য মুখার্জী বলছে লিখে রাখ।আরে আমাদের একটা আশীরবাদ আছে না? হা হা ..
তা কোনটা বেড়োবে কাল ‘Unforgettable Three Years’? মানে আমাদের কলেজ লাইফ নিয়ে লিখেছিস যেটাতে? আচ্ছা ঐ বড়ো বড়ো তিন-তিনটে বছর ধরালি কিভাবে একটা বইতে?আর গল্পে আমি আর আদি আছিতো?
কিন্ত তোর GRE?
দ্বীপ- তুই,আমি,আদি ছাড়া কি কলেজের গল্প হয়?সবাই আছি।শুধু নাম গু্লো পালটে দিয়েছি।তোর নাম অরণ্য থেকে হয়েছে আকাশ, আর আদি হল অয়ন। আজ আদিকে ফোন করেছিলাম কাল প্রেস ক্লাবে যাওয়ার জন্য। বলল কাজের চাপ, সময় করতে পারলে যাবে।তোকে তো ডেকেও লাভ নেই, কোন মুলুকে গিয়ে পরে আছিস।আর আমার GRE? আরে হবে হবে...
অরণ্য- আদি তো সবসময় চাপেই থাকে।সেই কলেজ লাইফ থেকেই তো দেখে আসছি।ওর কি খবর? দুমাসে একবার অনলাইন পাই।কলেজের যেমন ছিল তেমনই আছে,রাত মানে ঘুমাতেই হবে ওর!
দ্বীপ- আদিও এসেছে দেখ।এই মাত্র তুই ওর কথা বললি আর ওকে পেয়েও গেলাম।কাল তোরাইতো সব।আকাশ আর অয়ন।কেমন দিয়য়েছি নাম দুটো?দা্রূন না?
আদি- কিরে দুজনেই আছিস?গ্রেট। অরণ্য,জানিস কাল দ্বীপের প্রথম বই বেড়োচ্ছে।ভাবা যায়?দ্বীপ কাল থেকে জয়দ্বীপ গোস্বামী,কি সিরিয়াস ব্যাপার।
অরণ্য- হ্যাঁ, শুনলাম।কাল আমাদের দুজনের নতুন দুটো নাম হচ্ছে,দ্বীপের দেয়া।অবাক লাগছে। আমার আরো অবাক লাগছে এত রাতে তোকে দেখে।তোকেতো এই সময় পাওয়াই যায়না!কি খবর ঘুম কাতুরে?ঘুমাসনি আজ?
আদি- এখনও অফিসে আমি।কাল ফ্রান্স থেকে দেলিগেটসরা সব আসবে তার জন্য কাজের চাপ প্রচুর।যা ঘুম পাচ্ছে আর মনে করাস না।
অরণ্য – আচ্ছা দ্বীপ, তোর লেখায় সব আছেতো?মানে ময়দান,কফিহাউস, কলেজের কাছের দোকান...আর ওই ফুটবল ম্যাচ দেখে রাতে বাড়ি ফেরা?সবকিছু...আর সব কিছুতেই আমরা...আবার ফিরতে পারবতো ওই দিন গুলোতে?
দ্বীপ- কেন দুর্গা পুজোতে,আমাদের তিনজনের কলেজ পালিয়ে সিনেমা যাওয়া,সব...কিছু বাদ নেই।পার্কের বেঞ্চে বসে আমাদের তিনজনের একসাথে তোলা ছবিটা বইএর কভারে রয়েছে।ভুলতে পারিনা বলে লিখেছি,ভুলতে চাইনা বলে লিখেছি। কাল তোকে কলকাতায় খুব মিস করব অরন্য।
আদি- সত্যি,খুব মনে পড়ে।
অরণ্য এবার পুজোতে আসছিসতো কলকাতায়?আরে madly bangali হয়ে chowrasta ভুলে bong connection ছাড়া কি থাকা যায়? চলে আয়।
অরণ্য- ফিরতে তো চাই।এখানে হাপিয়ে গেছি।পুজো মানেই তো কোলকাতা।তাছাড়া কিছু ভাবতেই পারিনা।খুব চেস্টা করছি পুজোতে কোলকাতায় ফেরার।
দ্বীপ- তোরা দেখছি আমাদের একসাথে দেখা একটা সিনেমার নাম ও ভুলিসনি?অরণ্য আমার বই পরতে চলে আয় এই পুজোতেই।চেস্টা না,চলে আয়। তিনজনে মিলে আবার প্রচুর ঘুড়ব,ঠিক আগের মত।

অরণ্যর কানে আসেপাশের অনেক আওয়াজ ভেসে এল।খেয়াল হল ওর বাকি টিম মেম্বাররা সব চলে এসেছে। কাজেই এবার উঠতে হবে তাকে। আদি আর দ্বীপ কে পুজোতে কলকাতাতে ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় জানিয়ে অরণ্য নিজের কাজে মন দিল।
আজ সারাদিন অনেক ওয়ার্কলোড সামলালো সে। আরেকটা ডেডলাইনের চাপ কাটিয়ে উঠল সে।কিন্ত সব কাজের মাঝে আজ খুব মনে পরতে থাকল কলেজের দিনগুলো।আজ অরণ্যর নিজেকে সবচেয়ে বেশি একা মনে হল।মনে হল সেই দিন গুলোতে আবার ফিরে যেতে। আরো বেশি জানাতে ইছা হল আকাশ আর অয়ন এর গল্পটা।
বাড়ি ফেরার পথে ভাবতে থাকল আজই কলকাতার বাড়িতে ফোন করে সে জানাবে পুজোতে ফেরার কথা।
অরণ্যর ঘড়িতে তখন রাত আটটা, ফোনটা বেজে উঠলো। দ্বীপ ফোন করেছে। একমূহুর্তও না ভেবে অরণ্য ফোনটা ধরল।
-হ্যাঁ, বল দ্বীপ কেমন কাটল আজ তোর প্রথম বইএর বার্থডে?কেমন রেস্পন্স পেলি বইটার?আদি এসেছিল?
-না,আদি আসেনি। ও আর আসবেনা।কাল রাতে আমাদের সাথে কথা বলে বাড়ি ফেরার পথে...
-কি? কি হয়েছে?
-একটা লরি...হাইওয়েতে...
ও আজ আসছে কিনা জানার জন্য ফোন করেছিলাম,তখনই শুনলাম...
ও তো সব সময় আমাদের সাথেই ছিল,কোনদিন আলাদা করে ডেকে নিতে হয়নি।আর আজ যখন ফোন করলাম ডাকার জন্য ও এলোনা...কাল রাতেও তো কথা হল...
এরপর আর দুজনের মধ্যে কোন কথা হল না।বেশ কিছু সময় দুজনেই ফোনটা নিজেদের কানের সামনে ধরে রাখল।
কলকাতায় আজ ‘Those Unforgettable Years’ প্রকাশিত হয়েছে।আনুষ্ঠানে অনেক পরিচিত লেখকেরা হাজির ছিলেন।বইএর প্রথম পাতাতে লেখা- To Adi, Aranya and all of my friends....
আজ সারারাত অরণ্য জেগে রইল।অরণ্য সময়ের হিসাব মেলাবার আপ্রাণ চেস্টা করল। সে তো আজ সকালেই কথা বলল আদির সাথে...কলকাতায় যখন কালকের রাত্রি।সময়ের এই হিসাবের মাঝেই কি হারিয়ে ফেলেছে সে আদি কে।অরণ্যর মনে হতে লাগল আদির বলা শেষ কথা... “অরণ্য এবার পুজোতে আসছিসতো কলকাতায়?আরে চলে আয়।”...
এবার পুজোটা জয়দ্বীপ একা কাটালো কলকাতায়।ঠিক কিভাবে অরণ্য তা জানেনা।অরণ্য বাড়ি ফেরার ছুটি পেলোনা। সে এবার পুজোতে কলকাতার অনেক দুরেই রইল।
তার ঠিক পরের বছরের পুজোতে কলকাতাই একা পড়ে রইল, দ্বীপ আর অরণ্য কে ছাড়া ।কারণ জয়দ্বীপ তখন GRE দিয়ে কলকাতার বাইরে।
বইটা বেস্টসেলার হতে না পারলেও মোটামুটি ভালোই বিক্রি হল। দুবছর পর অরণ্য কলকাতায় এল দ্বীপের দ্বিতীয় বই প্রকাশের আনুষ্ঠানে। এবারের বইয়ের নাম ‘The Night Before Death’।বইএর প্রথম পাতাতে লেখা- In search of AYAN..এটাতেও প্রধানত তিনটে চরিত্রই রইল।আদি, আকাশ আর লেখক নিজে।অয়ন নামের চরিত্রটা আর পাওয়া গেল না।তার জায়গা নিল আদি।